শিক্ষাই
বিশৃঙ্খল এড়ানোর চাবি
আবুলকালামআজাদবাসু
3/1/2013
দূর দূরান্তে যেথায় কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই অনেক জ্ঞানী
তাদের নিমিত্তে রেখে গেছেন অনেক মূল্যবান চাবি কাঠি শিক্ষার জন্য ৷ আজকাল ভালভাবে
লক্ষ্য করলে পৃথিবীর সর্বত্র অজ্ঞরা খুব তাড়াতাড়ি অন্যের স্বার্থ রক্ষার্থে
প্রভাবিত হয়ে পড়ে এমন কি জীবনও বিসর্জন করে দেয় ৷ স্বার্থপর ব্যক্তিরা নিজ
উদ্দেশ্য আদায় করার জন্য অজ্ঞদের ছলে বলে তাদের কাজে লাগায় ৷
একজন জ্ঞানী বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে শিক্ষিতা মাতা দাও বদলে আমি
তোমাদের ভাল জাতি দেব ৷’ একথা কেবল সত্য নয় শিক্ষার অভাবে বর্তমান বিশ্ব ভুগছে ৷
অজ্ঞ লোকেরাই জনবসতি জানমাল ধ্বংস করছে এই ভেবে যে তারা জীবন বিসর্জন করলে স্বর্গ
লাভ করবে ৷
একজন মুসলিম শিশু জন্মলগ্নে যে আযানের ধ্বনি শুনে বা
প্রার্থনা করার নিমিত্তে যে ডাক তা কর্ণগোচরই-ভূত করা হয় রীতি অনুযায়ী ৷ হয়তো
অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্মমতে সব শিশুদের শান্তির বাণী শুনায়ে থাকে ৷ এখানে
মানসিক আচরণ বা মনস্তত্ত্ব কাজ করে যে কেউ ভাবলে দেখতে পাবে ৷ ভবিষ্যতে শিশুটি হবে শান্তি-প্রিয় ৷ মূলে সব
ধর্মই মানুষের শান্তির জন্য ৷ উপস্থিত এটায় মাথায় আনতে হবে কারা শিক্ষা গ্রহণ করে
না ৷ না করার পিছনে কারণ কি ? (একটি আলোচ্য বিষয় যে, এই সব শিক্ষা কিন্তু শিক্ষা
নয় যতক্ষণ না তার সাথে বিনয়ের এবং দূরদৃষ্টি যোগ না হয়, ঐ শিক্ষাকে সনদ প্রাপ্ত
শিক্ষাই বলা যায় ) ৷ কোন কারণে বড় কোন এক এলাকা জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা স্কুল
কলেজে নাই যার ফলে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না বা অভাবের তাড়নায়, দারিদ্রটার
কারণেও হতে পারে ৷ এমনি এলাকায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর ধরে এ হাল অবস্থা চলতে
থাকলে তাদের বয়সও পঞ্চাশের উপরে ৷ ঐ সব এলাকার লোকদিগকে সহজে মাথায় বিষ প্রয়োগ করা
যায় আর স্বার্থান্বেষী মহল তাই করে ৷ এটা এরূপ কেন ?
এমন দেশ রয়েছে তার ভিতরে অনেক এলাকায় যেখানে রাষ্ট্রের কোন
আইন শৃঙ্খলা বা নিয়ন্ত্রণ নাই অথচ ঐ এলাকা ঐ রাষ্ট্রের অংশ বিশেষ ৷ হয়তো তাদের
শিক্ষা ব্যবস্থাও অনুরূপ ৷ অন্য কারণ এই যে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকে তথায় তা
বহুদূর যার ফলে এমন লোক সকল বড় হয়েছে কোনরূপ শিক্ষা দীক্ষা ছাড়াই কেবল তারা শিখেছে
বড়দের চাল চলন ৷ ঐ সব এলাকায় গোত্র প্রধান কর্তা ৷ তার হুকুম আদেশ ইচ্ছাই
বাস্তবায়ন হয়ে আসছে ৷ প্রাচীন কালে বাংলার অবস্থাও তদ্রূপ ছিল ৷ (এখানে উল্লেখ্য
যে কোন এক প্রকারে একজন লোক ঐ সমাজ থেকে বের হয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক হন ৷ হাজার হলেও মাতৃভূমির প্রতি সবার প্রাণের টান থাকে ৷ তাই ঐ ভদ্রলোক
একদিন নিজ বাড়ীতে যান ৷ জমিদার বাবুর সাথে দেখা করা প্রয়োজন ৷ কিভাবে দেখা করবে ?
ঐ পোষাকে তো দেখা করা যায় না ৷ জমিদার বলে কথা আছে না ৷ ভাল পোশাক পরিচ্ছদ যদি
জমিদার বাবু দেখতে পান তাহলে পরিবারের সবার গর্দান যাবে ৷ তাই ঐ ভদ্রলোক পায়ের
জুতো খুলে হাতে নিলেন এবং খালি পায়ে অতি কষ্টে
জমিদার বাবুর সাথে একবার দেখা করলেন ৷ কথিত আছে যে, একটি শিশু ঐ জমিদারের
সুন্দর চেয়ার দেখে চুপে চুপে গিয়ে ঐ চেয়ার বসলেন ৷ জমিদার বাবু তা দেখে শিশুটিকে
মাতার উপর তুলে মাটিতে জোরে আছাড় মেরে মৃত্যু প্রদান করেন ৷ আরও কথিত আছে যে
জমিদার বাবুর বাড়ির সামনে যদি কাকেও হেটে যেতে হয় তখন তাকে জুতো খুলে হাতে নিতে হত
৷ এই সমস্ত লোক যতই পুণ্যের কাজ করুক ঘৃণিত কর্ম কভু মোছে যাবে না ) ৷ আমাদের
আলোচ্য বিষয় যেথায় রাষ্ট্রের আইন চলে না তথায় গোত্র প্রধানদের এক এক এলাকা রয়েছে ঐ
সীমারেখা পার হলেই তাকে শাস্তি প্রদান করা হয় ৷ তারা রাষ্ট্রকে কোন রকম কর প্রদান করে
না বরং উল্টো রাষ্ট্রই তাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন ৷ যদি কেহ মারাত্মক অপরাধ করে
কোন প্রকারে ঐ স্থানে পৌঁছে তাহলে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ ৷ বছরের পর বছর ঐ স্থানে
বাস করলেও কেহই তার খোঁজ নিবে না ৷ (বর্তমানে অনুরূপ দুর্গ গড়ে উঠেছে কিছু কিছু
পুণ্যবানদের আস্তানায় যেথায় বেশ বদলে মারাত্মক অপরাধীরা ঠাঁই নেয় এবং ধারণা দিয়ে
থাকে তারা প্রায়শ্চিত্তের আশায় উক্ত জায়গায় অবস্থান করছেন ) ৷ বলা হচ্ছিল ঐ সব
এলাকার লোক বর্তমান বিশ্ব থেকে বহুদূরে অবস্থান করছে ৷ মূলে শুনা যায় ঐ সব এলাকার
লোক নতুন শিশু জন্মে ধর্মের শান্তি বাণীর বদলে প্রথমে গুলাগুলির শব্দ বাচ্চাদের
কানে দেন যাতে সে ভাল যোদ্ধা হয় ৷ আমি যেমন ব্যাকরণ হীন লিখি তদ্রূপ ঐ সব অজ্ঞদের
জন্য আইন কোন কাজেই আসেনা ৷ সেথায় কিভাবে সংস্কার করা যায় তাই বিজ্ঞদের চিন্তার
প্রয়োজন ৷ এ সব লোকদিগকে অন্ধকার থেকে আলোতে ফিরায়ে আনতে প্রচেষ্টা চালানো দরকার ৷
কেবল মুসলিম অধিবাসীরাই এ সব পরিস্থিতির স্বীকার ৷
কেবল মুসলিম বললে ভুল হবে যারা গভীর অরণ্যে বাস করে তারাও একই
পরিস্থিতিতে বাস করে ৷ শুনতে অবাক লাগে যে তারা তাদের পিতামহ ও মাতামহীদের বলি
দিয়ে ভোজ উৎসব পালন করে থাকে ৷ বৃদ্ধ বয়সে তাদের হত্যা করে এ উৎসব পালন করা হয় ৷
তারা মনে করে বুড়োদের করার কিছু নেই বরং তারা সন্তানের জন্য বোঝা স্বরূপ ৷ গর্ব
করে তারা মাথার খুলি সাজিয়ে রাখে ৷ আগন্তুকদের গর্ব করে তাদের দাদা পর-দাদাদের
মাথার খুলি প্রদর্শন করে তৃপ্তি পান ৷ তারা কি শিক্ষা দীক্ষায় ও সংস্কৃতি থেকে বহু
পিছনে নয় ?
এখানেই এটার শেষ নয় অন্য স্বভাবের লোকও বর্তমান ৷ সভ্য দেশের
কথা শুনলেও অবাক লাগে ৷ ঐ পাহাড়ি এলাকার লোকের মত বরং আরও বেশী সম্পূর্ণ উলঙ্গ
অবস্থায় এক সমাজ ঐ সভ্য দেশে বাস করে ৷ তবে তাদের জন্য নির্ধারিত এলাকা রয়েছে ৷ শিক্ষার
প্রকৃত মূল্য কোথায় ? তাদের ধারণা আদি যুগের সেই সূত্র যে পৃথিবীতে আসার সময় উলঙ্গ
এসেছি এবং উলঙ্গই ফিরে যাব ৷ এই যদি সভ্য দেশের অধিবাসীদের অবস্থা হয় তাহলে
উন্নয়নশীল দেশের অবস্থা কি হতে পারে ?
কাকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করা যায় ! যারা উপযুক্ত শিক্ষা
দীক্ষা পাচ্ছেন না কোন কারণে, হয়তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে নয়তো কোন রূপ
হাঙ্গামা বিশৃঙ্খলা বা যুদ্ধ বিগ্রহের ফলে ৷ ঐ এলাকার বাসিন্দা কি ধনী বা গরীব কোন
তফাত নেই ৷ যে কেউ ইচ্ছা করলে বিশেষ করে অসৎ লোক, নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে তাদের ধ্বংসাত্মক
কাজে লাগাতে পারে ৷ অজ্ঞরা মিথ্যা আশ্বাস বেশী শুনে সাথে ধর্মের বানোয়াট কিচ্ছাকে
বেশী বেশী প্রাধান্য দেয় ৷ এই, এই কাজ করলে যা ইসলাম বহির্ভূত তবেই পরকালে সুখে
থাকা যাবে ৷ যদিও তারা স্কুলে যাতায়াত করেছে তবুও তাদের ধর্মের গভীর তথ্য ও তত্ত্ব
জানা হয়নি ফলে ঐ রূপ নেতারা কেহই হাঙ্গামায় আহত বা নিহত হন নি, কিন্তু নিহত হচ্ছেন
আমার মত বুদ্ধিসম্পন্ন অজ্ঞরাই প্রতিটি ক্ষেত্রে ৷ এটা কি করে সম্ভব ! অনুশীলনই
সেই পথে নিয়ে যায় ৷ অনুশীলন ছাড়া কোন এক ব্যক্তিকে যদি বলা হয় সামনে গেলেই তুমি
মরবে তখন সে যাবে না ৷ অনুশীলন করা ব্যক্তি তা বিশ্বাস করলেও সে আগুনে ঝাপ দিবে ৷
যেমন অপরাধী চক্রের খাতায় নাম লিখলে সে খাতার নাম কর্তনে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয় ৷
অন্য কারণ হল মরণে পরকালে সুখ লিখা আছে এ সনদপত্র পাওয়ার ফলে ৷ এটা এক ধরণের
সামরিক অনুশীলনের ন্যায় ৷ একবার এক নামী ব্যক্তি বলেছেন সামরিক বাহিনীতে বোকা এবং
বলদরাই যোগদান করেন ৷ ভদ্রলোকের যুক্তিও অনুরূপ যে জেনে শুনে আগুনে পা রাখছেন ৷
আকাশ থেকে ঝাপ দিলে মৃত্যু জেনেই ঝাপ দিচ্ছেন কিন্তু অনুশীলন তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে
সহজেই নয় ৷ অনুরূপভাবে ভণ্ড শিক্ষকের পরামর্শ এবং উপদেশ নির্দেশ শুনেই স্বর্গের
আশায় জীবন বিসর্জন দিচ্ছে ৷ অনুশীলনের সময় ঐ ভণ্ডরা ছোট ছোট বিপদে বুঝিয়ে দিয়েছেন
সে মারা গেলেও তার পেছনে কোন চিন্তা নেই এরূপ ভাবে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে
দিয়েছেন ৷ মরার পর ঐ ভণ্ডরা কি তাই করছেন ? অনুশীলনটা তারা একেবারে অল্প বয়স্কদের
দিয়ে থাকেন খুব সততার সাথে আর যত ভাল কর্ম তার উদাহরণ দিয়ে তাদের সব সময় ভাল ভাল
কর্ম করতে বলেন ৷ ভণ্ড-নেতাই জানেন কি অপ-কর্ম তাদেরকে দিয়ে করাবে ৷ যখন একটু
জ্ঞান বুদ্ধি বাড়ে তখন তাকে পদোন্নতি দিয়ে ছোট দলের নেতাই বানানো হয় ৷ নেতা বলে
কথা, কম কিছু নয় ৷ সামান্য কর্তৃত্ব দান ভণ্ডদের কৌশল, তা কিন্তু অনুশীলন-কারী
বুঝার আগেই তার প্রকাশ ছড়িয়ে পড়ে ৷ এ রাস্তা থেকে বের হবার উপায় নেই ৷ ন্যায়
অন্যায় বিচার করার ক্ষমতা আর থাকে না ৷ এই সমস্ত জায়গায় শিক্ষা, যে শিক্ষা বিনয়
এবং দূরদৃষ্টি শেখায় অন্ধকার থেকে আলোতে প্রবেশ করায়, সেইরূপ শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন
নচেৎ অজ্ঞরা নিরপরাধীদের হত্যা করবেই ৷ মনে রাখতে হবে যে জুলুম, অত্যাচার, অন্যায়
ও অবিচার জন্ম দেয় সমাজ বিরোধী লোক যারা পরবর্তীতে অসৎ কর্ম করে ৷
9
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন