নারী
জাতির অধঃপতন রোধে সঠিক পথ
লেখিকা:-শাহানাজ
আক্তার (রুমি), চট্টগ্রাম ৷
শিশুর
জন্ম হয় নিষ্পাপ বা মুক্ত অবস্থায় ৷ কোন সৃষ্টি স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, স্বয়ম্ভুও নয়,
তাই কেউ স্বেচ্ছায় দেহধারী হয়ে পৃথিবীতে আবির্ভাব করতে পারে না ৷ কোন অদৃশ্য একক
সত্তার ইচ্ছায় দুনিয়াতে আসতে হয় ৷ আবার যেভাবেই হোক না কেন সে সত্তারই ইচ্ছায়
দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিতে হয় ৷ যদিও যেতে কেউ চায় না তবুও বাধ্য হয় ৷ কাজেই
প্রতিটি নবজাতক নির্দোষ ও নিরপরাধ কিন্তু তাদের যখন জ্ঞান বুদ্ধি, বুঝ ব্যবস্থার
বয়স হয় তখন তারা সঠিক ইসলামি শিক্ষার অভাবে ধীরে ধীরে পারিবারিক সামাজিক, পরিবেশ
পরিস্থিতির কারণে এবং ঘর শত্রু সপ্ত রিপুর তাড়নায় হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি,
স্বার্থপরতা, অসৎ-অশালীনতায় ও পাপ পঙ্কিলতায় জড়িত হয়ে পড়ে ৷ দুনিয়ার বৃদ্ধ কালে এ
অবস্থা আরও চরম আকার ধারণ করেছে ৷ লজ্জা হচ্ছে ঈমান বা ধর্ম বিশ্বাসের অংশ ৷ আর
সঠিক ধর্ম বিশ্বাসের অভাবে নারী পুরুষের লজ্জা চলে যায় ৷ লজ্জা চলে গেলে মানুষ
অশ্লীল, অশালীন বেহায়াপনা কর্মকাণ্ড নিঃসংকোচে করতে পারে ৷ বিবেকের মাথা খেয়ে সকল
প্রকার অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায় এবং ধমার্দর্শ অনুশীলনের প্রেরণা হারিয়ে
পাশবিক বনে যায় ৷ এভাবেই মানুষের চারিত্রিক অধঃপতন ঘটে ৷ বতর্মানে এ অধঃপতন সমাজে
বৃহদাকারে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে ৷ উল্লেখ্য, নারী জাতি মানব জাতিরই একাংশ ৷ নারী
পুরুষের সমন্বয়ে জাতি গঠিত, সমাজ গঠিত, সভ্যতা গঠিত হয় ৷ সুতরাং অধঃপতনের জন্যে
উভয়-ই দায়ী ৷ তবে পুরুষের জন্য নারী হলও মহা-মূল্যবান বস্তু, অমূল্য রতন ৷ বস্তুত:
নারীরা হচ্ছে পুরুষের মোহিনীয় বস্তু ৷ তাই আকর্ষণীয় বস্তুকে সংরক্ষণ করতে হয় ৷
ঢেকে রাখতে হয়, যথার্থ রূপে পরিচর্যা করতে হয় ৷ মহানবী (সঃ) বলেছেন যে, নারীরা তথা
স্ত্রীরা হচ্ছে তোমাদের শস্যক্ষেত্র স্বরূপ ৷ যেমনি ফলন ফলাবে ঠিক তেমনিই তার ফসল
তৈয়ার হবে ৷ অর্থাৎ নারীকে গঠন করা তথা উন্নত-সভ্য মাজিত-পরিশীলিত যোগ্যতম স্থানে
উন্নীত করার দায়িত্ব-কর্তব্য পুরুষের ৷ অর্থাৎ পিতা-মাতা, স্বামী এবং প্রতিটি
নাগরিকের ৷ নারীকে যাবতীয় অকল্যাণ-অমঙ্গল-অমযর্দা থেকে সর্বশক্তি দিয়ে আগলে রাখতে
হবে, পবিত্র রাখতে হবে পুরুষকে ৷ সর্বোপরি তাদেরকে আমাদের আমানত স্বরূপ হেফাজত
করতে হবে ৷ কারণ তারা আমাদের মা জননী, চাচী, ফুফু, খালাম্মা, বোন এবং প্রিয়তমা সহধর্মিণী
তথা অর্ধাঙ্গিনী ৷ কথায় আছে- ‘যতনে রতন মিলে’ ৷ এই মহারত্নের যথাযোগ্য যত্ন সেবা ও
সাবধানতা অবলম্বন করতে পারলে ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্র এক মহা অভূত পূর্ব
উন্নত সুন্দর পৃথিবী গঠিত হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই ৷ কিন্তু ব্যর্থ হলে বা
করতে না পারলে সমূহ বিপদ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে ৷ কাযর্তঃ হয়েছেও তাই,বতর্মান
রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় এ চিত্র প্রকট ৷ এক শ্রেণীর মানবিক বিকারগ্রস্ত পুরুষ
আছে, যারা ললনাদেরকে স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা শেখাচ্ছে ৷ নারীর লাজুকলতা হলও
গোপনীয় বিষয় ৷ কিন্তু কলঙ্কিত মানুষ নামের পুরুষেরা তা মানতে নারাজ ৷ তাদের চেতনার
বহ্নি শিখা পচে গেছে,গলে গেছে,নষ্ট হয়ে গেছে ৷ তাদের বোধ্যে-দয় হয় না, হওয়ার
রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে ৷ তাই তারা বিভিন্ন আকর্ষণীয় কুযুক্তির বেড়াজালে আটকিয়ে
নারীদেরকে বেহায়াপনা ও উলঙ্গ-পনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ৷ তাই আজ অধিকাংশ নারীদের
সতীত্ব নষ্ট করা হচ্ছে, অনেক সময় ধর্ষিতা বানানো হচ্ছে ৷
এখানে
একটি বিষয় লক্ষণীয়, আর তা হলও উপরের অবস্থা গুলো যে খারাপ, ধর্ম বিরোধী, সমাজ
বিরোধী, নৈতিক চরিত্রহীনতা, পাপকর্ম, তা মোটামুটি ভাবে সবাই জানে এবং অনেকেই
শাস্ত্র বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপদেশ দিয়ে কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছে উন্নত চরিত্র গঠনে আধুনিক সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু অবস্থা
তথৈবচ ৷ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না,দিন যত এগোচ্ছে নৈতিকতা আগের চেয়ে আরও খারাপের দিকে
যাচ্ছে ৷ তার কারণ কি ? কারণ কিছু নয়, একমাত্র দ্বীনুল ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ভাবে
না জানা, আর ভুল জানা বা বিভ্রান্তি এবং আমিত্ব ভাবের জন্য ৷ আর নেতৃত্বদান
ব্যক্তিবর্গ ও কর্তৃত্ব-বানগণ অপরকে হুকুম করে,পথ প্রদর্শন করে, উপদেশ দেয় ঠিকই
কিন্তু নিজকে উপর তলার ভেবে নিজেই আমল করে না তথা আদর্শ স্থাপন করে দেখাতে পারে
না, যা রসুলে করীম (সঃ) এর সুন্নতের বিপরীত ৷ বিশ্ব জাহানের প্রিয় নবীজী তো মুখে
যা বলতেন কার্যক্ষেত্রেও তা দেখিয়ে দিতেন, ফারাকটা এখানেই, প্রিয় পাঠক! আমরা যদি
এখনও নবীর আদর্শ প্রতিটি ক্ষেত্রে পালন করতে পারি, সুন্নত মোতাবেক জীবন গঠন করতে
পারি ৷ তাহলে কেবল মাত্র শান্তি লাভ করতে পারি এবং ইসলামের স্বর্ণযুগ আবারও ফিরে
আনতে পারি ৷ এ জন্য যা সর্বাগ্রে প্রয়োজন তা হলও ইসলামের অভ্রান্ত চর্চা ও
বাস্তবায়ন ৷ কেবল মাত্র তাই হলে ইসলামের মূল্যবোধ মানব অন্তঃকরণে গ্রথিত-প্রোথিত
করা সম্ভব হবে ৷ তখনই একমাত্র তখনই গঠিত হবে নারী পুরুষের মিলিত মার্জিত সুন্দর
সভ্য সমাজ ও সংস্কৃতি ৷ সেদিন প্রকৃত সুখ শান্তি কাকে বলে (!) পৃথিবীর মানুষ চিত্ত-ভরে
অনুভব করতে পারবে ইনশাআল্লাহ ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন