আমার কথা প্রথম খণ্ড (২০)
আবুলকালামআজাদবাসু
18/2/2013
তোর লাগিয়া কি করেনি তৈরি প্রকৃতি
যাঁর হস্তে ন্যস্ত নিখিল সার্বভৌমত্ব?
যদি হও উদ্যত করতে দ্বন্দ্ব ভবে,
এসো না তবে সত্য পথে মহা-গ্রন্থের ৷
গর্ব করে বলেছিস আনতে দলিল,
কোন শাস্ত্র হলে তোর গর্ব হবে খর্ব
সর্ব প্রমাণ দাখিলায় আছে নজির ৷
রচয়িতার কিতাব রচনার পূর্বেই সর্ব-কৌশলী এমন নজির সৃষ্টর মধ্যে আনয়ন করেছেন তা সব ধর্মের
ব্যক্তিদের নিমিত্তে বড় ধর্ম বলে কালে সব ধর্মাবলম্বীদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য ৷ তিনিই সেই মহান
যাঁর কাছে বিশ্ব প্রকৃতির সার্বভৌমত্ব ৷ যদি পার আনয়ন কর অনুরূপ দৃষ্টান্ত যা
কোরআন ও হাদিছ সম্মত হয় ৷ সব ধর্মের মূলই হচ্ছে বিশ্বপ্রকৃতির ধর্ম,যে ধর্মের
উদাহরণ আল্লাহই সর্বক্ষেত্রে উপদেশ হিসেবে মানুষের কাছে পেশ করেছেন৷
“এবং ইহা আমার যুক্তি প্রমাণ যাহা ইব্রাহীমকে
দিয়াছিলাম তাহার সম্প্রদায়ের মুকাবিলায়; যাহাকে ইচ্ছা মর্যাদায় আমি উন্নীত করি;
তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞা-ময়, জ্ঞানী ৷” ৬(৮৩) কোরআন ৷
হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর যামানায় সেই সম্প্রদায়কে
বুঝানোর জন্য তিনি দান করেছেন তাঁকে যুক্তি ও প্রমাণ ৷ এ কম্পিউটার যুগে কেবল ওহী
প্রচার করে যথাযথ প্রমাণ ব্যতীত কোন মতেই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ৷ এ আয়াত ৩(৫৫) কোরআন যে
যুক্তি ও প্রমাণ অবতারণা করা হয়েছে তা কোনমতেই কারও খণ্ডানোর পথ হয়তো নেই; কারণ
প্রকৃতি এবং কাল ইহাতে জড়িত, আরও বাস্তব দৃষ্টান্ত এ যে ইসরাইল রাষ্ট্র ৷ কারণ এ
রাষ্ট্রকে পৃথিবীর মানচিত্র হতে মুছে ফেলা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় ৷ একটা আয়াত দ্বারা যা প্রমাণ হল তার বিপরীতে কোন
যুক্তি তর্ক খাড়া করা কোন বিজ্ঞ-লোকের পক্ষে সম্ভব নহে ৷ তবে তারা বলবে ঈসার
(আঃ) পুনরাগমন প্রকৃতি বিরোধী ৷ হ্যাঁ, তাই ৷ ইহাই সর্ব কৌশলীর কৌশল ৷ ইহুদিদের
চক্রান্ত তিনি যে ভাবে নস্যাৎ করেছেন, সে স্থলে ভেড়া না হয়ে একজন মানুষকে শূলে
চড়ানো হল কেন? উপযুক্ত স্থানে প্রয়োজনীয় বস্তু আনয়ন করাই হল পরাক্রমশালীর, প্রজ্ঞা-ময়ের কাজ ৷
“সে দোলনায় থাকা অবস্থায় ও প্রবীণ বয়সে মানুষে
সহিত কথা বলিবে এবং সে হইবে পুণ্যবানদের একজন ৷” ৩(৪৬) কোরআন
৷
মুসলিমদের এ তথ্য জানা আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ)
পুনরাগমন করবেন, কেবল মুসলিম নয় খৃষ্টান জাতিও তা অবগত আছে, কিন্তু ভ্রান্ত মতবাদ
পন্থীরা এ ব্যাপারে সন্দিহান ৷ তারা নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে হযরত ঈসাকে
(আঃ) সমাধিস্থ করেছেন সুদূর কাশ্মীরে ৷ উপরোক্ত
আয়াতের ‘প্রবীণ বয়সে মানুষের সহিত কথা বলিবে’ এতটুকু বাক্যাংশ কোন নবীর জন্য নাযিল
হয়নি ৷ তারা যদি তা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারত তাহলে সেই বছরগুলির জীবন কাহিনী
উত্থাপন করতে পারত, তাহলে তাদের প্রমাণ অনেকটা যথাযথ বলে প্রতীয়মান হত ৷ তা ছাড়া এ
সব প্রলাপ ছাড়া অন্য কিছু নয় ৷ তাই সুধী-জনের কাছে বরণযোগ্য নহে ৷
আর আল্লাহ অনর্থক কেন বাড়তি আয়াত নাযিল করতে যাবেন? কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন
নির্ধারিত ঘটনা ঘটতে পারে না ৷ ঈসাকে (আঃ) তাঁর কাছে তুলে নিয়েছেন কোরআন ও হাদিছ
অনুসারে তাঁর আবির্ভাব সব গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যা প্রকৃতির বিপরীত হলেও
আল্লাহ তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না ৷ ব্যাকরণেও ব্যতিক্রম ধর্মী নিয়ম রয়েছে এবং কাল-শেষে এরূপ বৈপরীত্য ধর্মী আইন বা বিধানমালা প্রকটিত হতে থাকবে ৷
“না, আল্লাহ তাহাকে তাঁহার নিকট তুলিয়ে লইয়াছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞা-ময় ৷”
৪(২৫৮) কোরআন ৷
একদল এ আয়াত উদ্ধৃতি দিয়ে বলে যে, পূর্বাপর কোন
লোকই (ইহুদি) দেখা যাচ্ছে না যাকে ঈসা সদৃশ করে শূলে লটকানো হয়েছে ৷ তাদের এরূপ
উক্তির আপত্তি খণ্ডন পূর্বেই করা হয়েছে ৷ হযরত ঈসাকে (আঃ) শূলে মৃতবৎ করে রাখার
মধ্যে কোন কৌশল, পরাক্রমশালীর কিংবা প্রজ্ঞা-ময়ের পরিচয় পাওয়া যায় না ৷ কারণ এরূপ
ঘটনা অহরহ ঘটেছে এবং ঘটতে থাকবে ৷ এমনকি মৃত্যুর পর গোসল দেবার প্রাক্কালেও অনেকে
জীবিত হয়ে উঠেন ৷ তর্কের খাতিরে উহাকে পরাক্রমশালীর কর্ম বললে চন্দ্র দ্বি-খণ্ডিত
করার ঘটনা, মেরাজ গমন, নীল নদীর উপর রাস্তা তৈরি, প্রায় তিনশত বৎসর পর গুহাবাসীদের
জীবিত করে জনসমক্ষে আনয়ন ইত্যাদি কোন অর্থই থাকে না ৷ ইহাতে হযরত ঈসা (আঃ)
অনুসারীদের পৃথিবীর যত্র তত্র তাদের আধিপত্য বিস্তার রোধ হয়ে যায় ৷ কারণ নকল মসি
বা সদৃশ মসির বিবৃতি কোথাও উল্লখ করা হয় নি ৷
“যাহারা সত্য প্রত্যাখ্যান করিয়াছে আমি তাহাদিগকে
ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি প্রদান করিব এবং তাহাদের কোন সাহায্যকারী নাই ৷” ৩(৫৬)
কোরআন ৷
সত্য যারা প্রত্যাখ্যান করে, তারা হোক সেকালের বা
একালের, তাদের কোন রকম রেহাই নেই ৷ তারা যখন ভুল অনুবাদ নিয়ে তর্কে বিতর্কে লিপ্ত
হয়েছে তখন তারা বিশ্ব-প্রকৃতির দৃষ্টান্ত স্বচক্ষে অনুধাবন করে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে
যে, যথাযোগ্য প্রমাণাদি বর্ণিত হয়ছে কিনা! ঈসা (আঃ) এর প্রকৃত অনুসারী হল মুসলিম
জাতি ৷ কারণ তারাই কোরআন পাঠ করে এবং দৈনিক পাঁচবার আল্লাহর স্মরণে ঈসার (আঃ) নাম
নিয়ে থাকেন৷
“হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছ
তাহাতে আমরা ঈমান আনিয়াছি এবং আমরা এই রাসূলের অনুসরণ করিয়াছি ৷ সুতরাং আমাদিগকে সাক্ষ্য
বহনকারীদের তালিকাভুক্ত কর ৷” ৩(৫৩) কোরআন ৷
কোরআনের সব আয়াতকে প্রকৃত মুসলিম যারা তারা তো
অন্ধে বিশ্বাস করে ৷ সেদিন তারা তারা জানল
যে, ১৯২৮ সালে আবিষ্কার হল সূর্য এপেক্সকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথচ মির্জা গোলাম
আহমদ কাদিয়ানী তারও পূর্বে অস্থি মজ্জাসহ ভূতলে মিশে গেছেন ৷ সুতরাং ধূম্রজাল
বিস্তার করে মানুষকে ঠকানোর পথ পরিহার করা বাঞ্ছনীয় ৷ অত্যধিক জ্ঞান আহরণের ফলে
কেউ যদি বিপদগামী হবার আশঙ্কা থাকে তাহলে তাকে আল্লাহর ও রাসুলের অনুসরণ করাই হবে
সরল পথ ৷ মানব আল্লাহর গুপ্তভেদ, প্রেম, জ্ঞান ও ভালবাসার পাত্র ৷ মানবসেবাই সব
ইবাদতের মূল বিষয় ৷ উল্লেখ্য যে যারা ৩(৫৫) কোরআনের আয়াত ঠিকভাবে অনুধাবন করতে
পেরেছেন তারা নিশ্চয়ই চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত হবেন যে, মুসলিম ও খৃষ্ট সমাজের বিপরীতে
অভিশপ্ত জাতি মাথাচাড়া দিয়ে কোরআনের প্রতিকূলে একটি রাষ্ট্র গঠন করেছে ৷ ইহা কখনও
ইসলামের পরাজয় নহে ৷ বরং পবিত্র বাণী
পূর্ণ হলেই নির্ধারিত ঘটনা সঙ্ঘটিত হবে ৷