শনিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

বিচার দিবসের পূর্বেই বিচার


বিচার দিবসের পূর্বেই বিচার
আবুলকালামআজাদবাসু
9/2/2013

একগ্রামে খ্যাতিমান এবং শারীরিক বলবান এক লোক ঐ এলাকায় বাস করতেন ৷ তিনি যেমনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী তেমনি সমাজের সামাজিক কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ৷ তখনকার দিনে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য এবং বিভিন্ন সংস্থারও সদস্য ছিলেন ৷ সুতরাং ঐ মহল্লার তিনিই শাসনকর্তা বলা চলে ৷ তিনি একজন মুসলিম এবং তাঁর পিতা ঐ মহল্লায় একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন ৷ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিনি আদায় করতেন ৷ এছাড়াও তাঁর প্রচুর জায়গা জমি ছিল ৷ সমাজে তিনি নামকরা একজন ব্যক্তি ৷
পাশাপাশি বাস করতেন অন্য এক ধার্মিক ব্যক্তি যিনি ইসলামের পথ অনুসরণ করে চলতেন ৷ ঐ ধার্মিক লোকটির স্ত্রী গৃহ পরিচারিকা ছিলেন উপরন্তু একজন পর্দানশীন মহিলা ৷ কেউ তাকে দেখতে পেত না এমনকি তিনি নিজ দেবরের সামনেও যেতেন না ৷ প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকেই দেবরের সাথে কথা বলতেন ৷ এই ছিল দুই পরিবারের বর্ণনা মোটামুটি
পাশাপাশি বাড়ীর অবস্থান এবং তার বাড়ীর সীমানা নিয়ে দু-ব্যক্তির মাঝে বিরোধ ছিল ৷ সেই বিরোধ লোক-সম্মুখে তেমন সাংঘাতিক ব্যাপার ছিল না ৷ দুজনের ছেলেমেয়ে ছিল যারা স্কুলে লেখাপড়া করত ৷ একবার যখন বলা হয়েছে যে বিচার দিবসের পূর্বেই বিচার তখন সত্যিই সত্য রয়েছে ৷ লোকে বিশ্বাস করুক আর নাই করুক এই ঘটনা সত্যিকার অর্থে বর্ণিত হয়েছে ৷
এই ঘটনা সম্ভবত: ১৯৬০ সালে ছিল ৷ সেই সময় দেশ এত উন্নত ছিল না ৷ রাস্তাঘাটের অবস্থাও তদ্রূপ ছিল ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল শোচনীয় ৷ ঐ দিনটি বুধবার ৷ মনে থাকার কারণ হল সেদিন সাপ্তাহিক বাজার দিন ছিল ৷ ঘটনা বিবরণের পূর্বে দিনটি বলে রাখার অর্থ ঐ দিন কি ঘটতে যাচ্ছে তা বুঝানোর জন্যে ৷  
হঠাৎ এমন একদিন আসল যে ধার্মিক লোকটির সহধর্মিণী জ্বরে ভুগছিল ৷ শুনেছি কোন কারণ বশত: লোকটি তার স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে এবং চপেটাঘাত করেছে ঐ অবস্থায় ৷ জ্বরের কারণে হয়তো ভদ্র মহিলা তিনদিন পর মৃত্যু বরণ করেন ৷ মৃত্যুর পর সচরাচর নিয়মে তাকে দফন করা হয় পাহাড়ের পাদদেশে যেখানে কবরস্থান রয়েছে ৷ সেই থেকে দশ পনের দিন গত হয়ে গেল ৷ শুনা গেল তাকে কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য শহরের হাসপাতালে পাঠানোর আদেশ এসেছে ৷
কে উদ্যোগী হয়ে থানায় ঐ ধার্মিক লোকটির বিরুদ্ধে নালিশ করল? গ্রাম অঞ্চলটি এরূপ ছিল যে ওখান থেকে কোন যানবাহন শহরে আসা যাওয়ার রাস্তা ছিল না ৷ কি ভাবে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে শহরে নিয়ে যাবে সেটি যেন সবাইকে ভাবিয়ে তুলল ৷ আর এরূপ ঘটনা গ্রামে হয়তো প্রথম ৷ সবাই আতঙ্কিত ৷ সাহসিকতার সাথে কিছু লোক পুলিশের সাথে গেল লাশ উঠানোর জন্যে ৷ যাকে কেউ দেখেনি জীবিত অবস্থায় আজ সবাই তার লাশ দেখতে পেল ৷ যখনই লাশটি তোলা হল বাতাসের সংস্পর্শে এসে তা আরও বহুগুণে ফেঁপে উঠেছে ৷ সেই দিনটাই ছিল সেই বুধবার ৷ সমস্ত লোক মর্মান্তিক দৃশ্যটি দেখার জন্য এক জায়গায় একত্রিত হয়েছে ৷ লাশটি উত্তোলনের পর বস্তা ছাটাই জড়ায়ে মৃত লাশ বহনকারী খাটে তোলে প্রথমে ঐ বর্ণিত মসজিদের পুকুর পাড়ে রাখা হয়েছিল ৷ সে কি দুর্গন্ধ সবাই নাকে কাপড় মোড়ায়ে লাশ দেখতে গেল ৷ আর নেতা-রূপী লোকটি পুলিশকে সহায়তা করার জন্যে সদা সাথেই ছিল ৷
খাটিয়াটি বহন করতে চারিপাশে চারজন লোক কাঁধে নিয়ে প্রথমে ঐ মসজিদের পুকুরপাড়ে রেখেছিল ৷ ওখান থেকে শহরের উদ্দেশ্যে পায়ে হেটে লাশ নিয়ে যাবার জন্যে বহন করে আনা হল বাজারের সন্নিকটে ৷ সেই সময় প্রায় বিকেল চারটা আছর নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে লাশটি সেখানে রাখা হল ৷ সেই ধার্মিক লোকটি এবং তার ভাই হলেন আসামী এবং তাদেরকেই দীর্ঘ এগার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে তারপর যানবাহনে লাশটি নেওয়া হবে ৷ অন্য দুজনকে তাদের সাথে খাটিয়া বহন করার জন্য আনা হয়েছিল ৷ তারপর আবার তারা খাটিয়াটি লয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল আর পিছন থেকে লোক সকল অবাক হয়ে ভারাক্রান্ত ও অশ্রুসিক্ত-জলে তাকিয়ে রইল ৷
সেই দিন রাতে গ্রামের লোকজন ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি এই জন্য যে এরূপ ঘটনা ইতিপূর্বে তারা আর কখনও দেখেনি ৷ সবার মন এক রকম নয় ৷ কেহ কেহ সেই চিন্তায় গত তিন দিন ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করতে পারেনি কারণ সেই দৃশ্য চোখের সম্মুখে ভেসে উঠতও ৷ শুনেছি ঐ ক্ষমতাবান লোকটি থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছিল এবং লাশটি উত্তোলন করে শহরে আনার জন্য তদবির করেছিল ৷
এরপর ঠিক এক বছর গত হল ৷ একদিন ঐ নেতাকে ধারাল ছোরার আঘাতে সতের টুকরা করা হল কিন্তু শরীরের কোন অংশ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল না ৷ সবচেয়ে একটি বড় আঘাত দেখতে পেলাম কাঁধ থেকে পেট পর্যন্ত ৷ উক্ত ঘটনাটি ঘটে ঐ মসজিদ পুকুরপাড়ে যেথায় ভদ্র মহিলার লাশ প্রথম রাখা হয়েছিল ৷ এই অসৎ কর্মের নায়ক ছিলেন তার ভাই ও ভাইপো ৷ লোকটি স্কুলের প্রতিনিধি থাকায় স্কুল ছুটি হয়ে গেল ৷
হয়তো পাঠক বুধবারের কথা স্মরণ রেখেছেন ৷ একই দশা ঘটল এই লোকটির বেলায়ও ৷ ঐ মহিলার ন্যায় তাকেও মুড়ানো হল ৷ সেই স্থান থেকে মৃত-লোক বহনকারী খাটিয়াটি ঐ স্থানে বাজারের সন্নিকটে আনা হল ৷ তথায় বেলা চারটা বাজায় আছর নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে কিছুক্ষণ রাখা হল ঐ বুধবারে যেথায় রাখা হয়েছিল মহিলার লাশটি ৷ সেখান থেকে ময়নাতদন্তের জন্য যাত্রা শুরু করা হয় ৷ এটাই বিচার দিবসের পূর্বে যেন বিচার ৷
সত্য ঘটনা শুনে আপনার অনুভূতি কি?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন