শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

পিতা ও সাত সন্তান


পিতা ও  সাত সন্তান
আবুলকালামআজাদবাসু
16/2/2013

প্রত্যেক গল্পেই বিরাজ করে ভিন্নতা এবং কিছু সত্য কিছু নিজ থেকে তৈরি বানোয়াট ৷ নিজ বানোয়াট গল্পে যদি অর্থবহ উপদেশাবলি থাকে অন্যের কল্যাণার্থে তাহলে তাকে আশাদায়ক শ্রেণীতে গণ্য করা যায় ৷ যে সব গল্প নিকৃষ্টতম উপলব্ধিতে (অসামাজিক) উহা সমাজ এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর ৷ কিছু বাস্তব অমর ঘটনাকে অলঙ্কারাদি যোগ করে তার সাথে উদ্ভট কল্পনা মিশিয়ে আরও অতিরঞ্জিত করে উচ্চ মূল্যে বাজারে বিক্রি করা হয় ৷ এরূপ অর্থ-গৃধ্নু লোলুপ লোক সব সমাজেই পাওয়া যায় যারা (অসামাজিক) মানসিক বিশৃঙ্খল বই কিনে শান্তি বা প্রশান্তি ছেড়ে ৷ ঐ সব লোকের কথা চিন্তা করা যায় যে তারা জীবনে ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আরও ধনী ও নামীদামী ব্যক্তিরূপে প্রকাশ পেতে ৷ তারা কি গুরু বা গির্জার পিতাদের মত সুখী যাদের কোন অর্থ সম্পদ নেই ৷ অবশ্যই দেখা যাবে যার কোন অর্থ সম্পদ নেই তারা ঐ সব ব্যক্তির তুলনায় অনেক বেশী শান্তিতে ঘুমায় ৷ যার ধন সম্পদ বেশী সে সব সময় মনঃকষ্ট অনুভব করে আর লোভী সম্পদশালী মনঃকষ্ট ছাড়াও ভিতু-স্নায়ু চাপে ভুগেন ৷ কোন এক এলাকায় একজন অত্যন্ত লোভী ব্যক্তি ছিল ৷ তার একে একে সাত সন্তান ৷ কাল্পনিক কাহিনী বর্ণনায় নিজেরও অস্বস্তি লাগে ৷ এমন এক ব্যক্তি যিনি ওয়েব এ সত্য কথাই বলেন তিনিও অনেকের চোখে ধার্মিক ব্যক্তি নন ৷ দৃশ্যত যা দেখা যায় তিনি একজন বড় সাধু এবং ধর্মীয় গুরু ৷ যা হোক গল্পটি এই যে তার সাত সন্তান বড় হয়ে যার যার মতে ঘর সংসার করছে ৷ পিতা বৃদ্ধ থেকে হচ্ছে তাই ভাবল যে হজ্ব যাওয়া উচিত ৷ সুতরাং সে তাই করল, হজ্বে গেল এবং বাড়ি ফিরল ৷ সে ছিল সাংঘাতিক ধরণের কৃপণ যে একটি পয়সাও ছেলে-মেয়েদের জন্য খরচ করত না যদিও তার অনেক টাকা পয়সা ছিল ৷ মনের অভিশাপ অত্যন্ত মারাত্মক কারণ মনের কষ্ট থেকে তা হয় বলে ৷ তার কাজ হল টাকা জমা করা এবং জমিকে প্রসার অন্যের জমি থেকে ৷ নিজের জমিতে বাঁশের ঘেরা দিয়ে গাছ রোপণ এবং পরবর্তী বছর ঐ ঘেরা আর একটু বাহিরে দিয়ে গাছের চারাগুলিকে সরিয়ে দেয়া ৷ যদিও তার রয়েছে বিশাল কক্ষ বিশিষ্ট দালান যা বেশ কয়েক-তলা তবুও তার অভ্যাস ছিল টাকা ও জমি প্রসারিত করা ৷ তাতে সে মনে করত তার ছেলেরা সুখে শান্তিতে থাকবে ৷ ঐরূপে সে জমি প্রসারিত করতে করতে মানুষের হাঁটাচলার পথও দখল করে নিলো ৷ কোনমতে একজন লোক চলতে ফিরতে পারত ৷ তার আশেপাশে সবারই অসুবিধা হতে লাগল ৷ ঘৃণ্য কর্মের জন্য প্রত্যেকই তাকে চলার পথে গালি দিত ৷ লোকটি এখনও মৃত্যু বরণ করেনি কিন্তু মৃত্যুর ভাবনা এবং ভয় তাকে পেয়ে বসল ৷ সে অনেককেই বলে বেড়াতে লাগল তার মৃতদেহ কিভাবে বের করা হবে কারণ তার ঘরের ফটকের সামনে তো জায়গাই নেই ৷ এমনকি মৃত-বহনকারী খাটিয়াও ঐ পথ দিয়ে ফিরাতে পারবে না এবং খাটিয়াটি কোনমতে যেতে পারবে না ৷ গল্পে লোকটি মৃত কিন্তু তার সৌভাগ্য এই যে মৃত্যুর পূর্বে তার ছেলে মেয়েরাই অনেকাংশে ঐ ভাবনা জাগ্রত করতে সাহায্য করেছে ৷ তার এই অসৎ কর্মের জন্য তার ছেলেরাই তাকে গালিগালাজ করত ৷ উহার কারণ তিনটি ছেলেই একের পর এক পাগল হয়ে গেল এবং তারাই পিতাকে এই অপ-কর্মের জন্য দোষারোপ করত ৷ এই সবক্ষেত্রে আল্লাহর অভিশাপের চেয়ে তাঁর বান্দার অভিশাপ বেশী কার্যকারী হয়েছে ৷  আল্লাহ তাঁর সব বান্দাদের ধর্মমত নির্বিশেষে ভালবাসেন ৷ একদিন তিনি নবী নূহকে তার নিজের হাতে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল ভেঙে ফেলতে বললেন ৷ সেগুলি ভাঙার সময় তিনি মনে মনে ইতস্তত: বোধ করায় আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন তার কেমন লাগছে ৷ আল্লাহ বললেন যে তোমার কথায় প্লাবনের আঘাতে আমি না আমার কত বান্দাকে মৃত্যু দান করলাম ৷ সত্যিই একদিন লোকটি মারা গেল তার ছেলেরা চারিদিকে বসে দোয়া করার পরিবর্তে গালিগালাজ করতে লাগল কারণ তারা সমস্যায় পড়ে গেছে কিভাবে মৃতদেহ বের করবে? খাটিয়া ঢুকতে না পারলে ক্ষতি কি! মুসলিম হিসেবে ইসলামের প্রথা এই যে খাটিয়ায় মৃত দেহ তোলার পর চল্লিশ    কদম পথ অতিক্রম করার রেওয়াজ রয়েছে ৷ সেটা করা হয়তো অসুবিধায় তারা পড়েছিল ৷ ঐটা কেবল ঘটেছে ঐ ব্যক্তির স্বার্থপরতার কারণে ৷ অন্যের জমি দখলে নিজের কাছেও থাকে দুর্বলতা ৷ এই সব ক্ষেত্র সমাজের গণ্য মান্য ব্যক্তিদের দেখাশুনা করা দরকার যদি আশপাশ লোকেরা দুর্বল হয় ৷ আর না হয় মানসিক অশান্তি তথায় সদা বিরাজ করে ৷ যতই ধনী হউক, যতই চতুর হউক, যতই বিত্তশালী হউক মৃত্যু একদিন তার আসবেই ৷ আর অসৎ কর্ম করে থাকলে যা জনসাধারণের অসুবিধা হয় তাহলে নিজ পুত্র সন্তানেরাও তাকে বদদোয়া বা গালিগালাজ করবে ৷ ইসলামে এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা যদি কেহ অবৈধভাবে দখল করে তা জঘন্য অপরাধ তাছাড়া আশপাশ লোকেরা যদি দুর্বল অথবা এতিমের জায়গা হলে তা আরও জঘন্য অপরাধে গণ্য ৷ স্ব-কল্পিত গল্পটি কেমন লাগছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন