মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

আমার কথা প্রথম খণ্ড (১২)


আমার কথা   প্রথম খণ্ড (১২)
আবুলকলামআজাদবাসু
4/12/2012

কী হাল ! বন্দী আমি যে নির্ণীত পাগল,
পাগলের কি শোভা পায় দৃঢ় প্রত্যয়ে,
আশ্রমী আশ্রয়ে থেকে আলয়ের সাথে
দিবানিশি দ্বন্দ্বে হইলাম মত্ত-হারা ৷
ভাবনা চিত্তে নাহি পাই কূল কিনারা,
আটত্রিশ বৎসর লঙ্ঘিত বিনাশ্রমে ৷
তেমন কি যে করিব ব্যক্ত অতীন্দ্রিয়,
নাহি অলৌকিক ক্ষমতা, নাহি দক্ষতা,
কহিলাম প্রাণ-রাম, নহি প্রকাশিত,
ভ্রমে পতিত-জন, নহি আমি বরণ,
বিশেষজ্ঞের সনদ-প্রাপ্ত ক্ষিপ্ত চিত্ত ৷
কখনো প্রকৃতিস্থ, কখনো অপ্রকৃতিস্থ অবস্থা পরিলক্ষিত হবার কারণে হয়ে গেলাম নির্ণীত পাগল ৷ বন্দী দশায় পাগলের দৃঢ় প্রত্যয়ের বিবৃতি লোক সম্মুখে অবান্তর ৷ আশ্রমী অর্থাৎ ‘রূহ’ আশ্রয়ে থেকে অর্থাৎ সূক্ষ্ম নফসের সাথে অবস্থান করে আলয়ের, অর্থাৎ স্থূল দেহে, দিবানিশি তাদের দ্বন্দ্বের ফলে কখন যে আত্মহারা হয়ে পড়ি কে জানে ! এ ঘটনার পূর্বে স্বপ্নাদিষ্ট সংঘটিত ব্যাপার সদর দপ্তরে অবিরত ইতস্তত: সঞ্চালনে মনে ব্যাপকভাবে তা আন্দোলিত হচ্ছিল ৷ এমতাবস্থায় অনেক কথোপকথন এর সারমর্ম বাস্তবে জিসপ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ ৷ ডাক্তারদের মতে রোগী তখন বেশী ধর্মীয় আচার আচরণ প্রকাশ করে থাকেন ৷ এরূপে প্রায় চল্লিশ দিন গত হলে প্রকৃতিস্থ ভাব ফিরে আসে ৷ কবিতায় তাই নরাধম ব্যক্তির পাপসমূহ স্বীকার, কৃত কর্মের অনুশোচনা সবই উদ্ভাসিত হয়েছে ৷ ১৯৮৫ সালে ১৯শে মার্চ প্রথম স্বপ্নাদিষ্ট হই ৷ “সেই দিন ভোর রাত্রে কিয়ামতের মাঠে উপস্থিত হই, কেবল আমি এবং হযরত (সঃ), আর উচ্চ আসনে আসীন মহান আল্লাহ ৷ কিয়ামতের মাঠ শূন্য, কারণ আমার দু হাতে বিশ্বের সব লোক ৷ বাম হাতে ঐ সব লোক- সকল যাঁরা আল্লাহ-পাগল ও শরীয়তের নিয়ম কানুন পালন করে নি, ডান হাতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অন্য সকল লোক ৷ আল্লাহর ইশারায় আমি বাম হাতের
লোকগুলোকে উচ্চ আসনের পেছনে ছেড়ে দিলাম ৷ এবং ডান হাতের লোকদিগকে মাঠে ছেড়ে দিলাম ৷ তাতে হযরত (সঃ) যেন মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, কেন তাদেরকে পার করায়ে দেয়া হল ? তাঁর (সঃ) এর উক্তি হৃদয়ে কাঁটার মত বিদ্ধ হল ৷ কেবল বললাম, এ কাজ আল্লাহর ইশারায় সংঘটিত হয়েছে, তিনিও (সঃ) নিঃশব্দ হয়ে গেলেন বটে, কিন্তু বিদে কাঁটার দংশনে মনঃপ্রাণ ভারাক্রান্ত করে দিল ৷ জেগে দেখি হৃদয় দুঃখে ক্রন্দনে রত ৷”
অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় আল্লাহ একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করতে আদেশ করায়, নিজের দোষ স্বীকার করে বলা হল যে, হয়তো তিনি ভুল করছেন ৷ উত্তরে তিনি বললেন, “আমি যাকে ইচ্ছা তাকে মনোনীত করি, তুমিই সে-ই ব্যক্তি যে আগমন করার কথা ছিল ৷”
ধর্মে এতই গাফিল ছিলাম, কোন ব্যক্তি যে অবতরণ করার কথা তাও জানা ছিল না ৷ আজ আমি সে-ই ক্ষিপ্ত চিত্ত, পাঠক সমাজের সম্মুখে এ কথাগুলো উত্থাপন করার জন্য আগ্রহান্বিত ৷
“দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, মহামহিমান্বিত তিনি, সর্ব কর্তৃত্ব যাহার করায়ত্ত ৷ তিনি সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান ৷ ৬৭ (১) কোরআন ৷
এ রূপ ঘটনা যা স্বপ্নাদিষ্ট তা এক রকম স্বপ্নাদেশ বলে দৃঢ় প্রত্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে ৷ এ রূপ উক্তি যে, সেরূপ যেমন তেমন বচন নয় ভেবে, আল্লাহর নামে গবেষণা কর্ম শুরু করা হয়েছে ৷
“যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর স্মরণ লইবে, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ ৷” ৭(২০০) কোরআন ৷
উক্ত আয়াতের অনুসরণে মুসলিম হিসেবে যা জানতাম তা মনে মনে পাঠ করে আল্লাহর স্মরণ করাই ছিল তখন একমাত্র অবলম্বন ৷ কিন্তু কিছুতেই তার সুফল পাই নি ৷ বরং জীবনের সবকিছু হিসাব-নিকাশ দিতে বাধ্য হই ৷ তখনও  সত্য উপলব্ধি করার মত জ্ঞান ছিল না ৷ যদিও সত্য অনুভূতির যথেষ্ট সমর্থ ছিল, ধর্মশাস্ত্র এবং উহার বিধি বিধান সম্বন্ধে বিশেষ চেতনা লাভের মানসিক চিন্তাধারা তেমন গজায়ে উঠে নি ৷ অন্ধকারের মধ্যে কালাতিপাত ঘটেছে দীর্ঘদিন ৷ কেবল কোনমতে বেঁচে থাকার তাগিদে চাকুরী জীবনটা কাটছিল ঠিকমতে ৷
“আমি ইচ্ছা করিলে প্রতিটি জনপদে একজন সতর্ক কারী প্রেরণ করিতে পারিতাম ৷” ২৫(৫১) কোরআন ৷
এটা এমন নয় যে, আল্লাহ প্রতিটি জনপদে তাঁর সতর্ক কারী প্রেরণ করে নাই৷
মতান্তরে একলক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার বার্তাবাহক তিনি ধরায় প্রেরণ করেছেন ৷ এ তথ্য কাল্পনিক নয়, সুরা ফাতিহা এর মধ্যে একশত চুয়াল্লিশটি অক্ষর রয়েছে ৷ উহা থেকে এবং ইঞ্জিলের বাণী ‘এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার জেরুজালেম এর অধিবাসী’ থেকে এ সত্য (জাহেরি কালাম) উদঘাটন করা যায় ৷ তত্ত্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে তমসাচ্ছন্ন জীবনকে আলোতে প্রবেশ করার প্রচেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম এর মাধ্যমে সত্য ও মহাসত্যকে কথিত ‘মসির’ সহায় বিজ্ঞ ও সুধী-জনের সম্মুখে তুলে ধরার শিক্ষা অপ্রতুল হলেও জ্ঞেয় প্রকৃত সত্যকে মানব জাতির কল্যাণের লক্ষ্যে প্রকটিত করার জন্য পাঠক সমাজের কাছে এই আত্ম-প্রকাশ ৷ আল্লাহ সহায় হওন ৷


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন